
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীরা:
সংশোধিত প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর নতুন বিধান—‘নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক’—নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিভাজন তৈরি হয়েছে। বিএনপি ও এর সমমনা জোট এই বিধানের তীব্র বিরোধিতা করছে, অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল সংশোধনীটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
বিএনপি মনে করছে, এই বিধান তাদের জোটগত নির্বাচনী কৌশলকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং ঐক্য নষ্ট করবে। দলটি সংশোধনীটি বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আরপিওতে এই ধারা যোগ করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, যাতে জোটভিত্তিক নির্বাচন কঠিন হয়ে পড়ে। তারা মনে করছে, একই প্রতীকে নির্বাচন করলে ছোট দলগুলোর প্রভাবশালী নেতাদেরও সংসদে জায়গা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়—যা একটি পক্ষ মেনে নিতে পারছে না।
ইতিমধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশের পরদিনই বিএনপির শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,
> “এ ধরনের বড় পরিবর্তনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া উচিত ছিল। কমিশন সেটা না করেই নিজেদের মতো করে সংশোধনী জারি করেছে—এটা সঠিক হয়নি।”
একইভাবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন,
> “জোট নির্বাচনের উদ্দেশ্যই হলো একসঙ্গে প্রচারণা চালিয়ে জেতার চেষ্টা করা। আলাদা আলাদা প্রতীকে নির্বাচন করলে তা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই আগের নিয়মে ফেরার দাবি জানাচ্ছি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যু নিয়েই বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এখন আরপিও সংশোধনের গেজেট সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন,
> “গেজেট প্রকাশ মানেই এটি চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে যেকোনো সময় সংশোধনী আবারও পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে সময়ের সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।”
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তবে তফসিল ঘোষণার আগে এই বিভাজন রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন,
> “আরপিওর গেজেট পরিবর্তনের কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার জানা নেই। ভবিষ্যতে কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।”
মন্তব্য করুন