
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীরা:
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘুম শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, বরং এটি আল্লাহর বিশেষ এক অনুগ্রহ। সারাদিনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা ও পরিশ্রমের পর মানুষ ঘুমের মধ্যেই খুঁজে পায় প্রকৃত প্রশান্তি। পবিত্র কোরআনেও ঘুমকে মানুষের জন্য রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, এবং রাতকে করেছি আবরণ।” (সূরা নাবা: ৯-১০)
ইসলাম শুধু ঘুমকেই গুরুত্ব দেয়নি, বরং ঘুমানোর আগের কিছু আমল ও দোয়ার মাধ্যমে মুমিনকে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও ইমানের ওপর অটল থাকার পথও শিখিয়েছে। ঘুমানোর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো দু’টি দোয়া এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—যার একটি মানুষের ঈমানের ওপর মৃত্যু লাভের সুসংবাদ দেয়, আর অন্যটি অনিদ্রায় ভুগলে প্রশান্ত ঘুমে সাহায্য করে।
—
ইমানের ওপর মৃত্যু লাভের দোয়া
হাদিসে এসেছে—রাতে ঘুমানোর আগে পূর্ণ অজু করে ডান কাতে শুয়ে নির্দিষ্ট একটি দোয়া পড়তে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে ঘুমিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইমানের ওপরই মৃত্যু লাভ করবে।
দোয়াটির মূল বক্তব্য হলো—একজন মুমিন তার জীবন, আমল, দায়িত্ব ও ভরসা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দিয়ে তাঁর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করে।
এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়, তাঁর কিতাব ও তাঁর প্রেরিত নবীর প্রতি ঈমান নবায়ন করা হয় এবং নিজের দুর্বলতাকে স্বীকার করে আল্লাহর রহমতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়।
—
অনিদ্রায় ভুগলে যে দোয়া শিখিয়েছেন রাসুল (সা.)
অনেকেই রাতজাগা, অনিদ্রা বা অস্থিরতার সমস্যায় ভোগেন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) ঠিক এমন সমস্যার কথাই নবীজীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দেন, যা অনিদ্রা, অস্থিরতা এবং অশান্ত মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই দোয়ায় আল্লাহকে আকাশ-মাটি, সমস্ত সৃষ্টিজগত ও শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়। মূল বার্তাটি হলো—মানুষ তার সকল ভয়, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে তাঁর নিরাপত্তায় নিজেকে সমর্পণ করবে। এতে মনের অশান্তি দূর হয়ে ঘুম আসা সহজ হয়।
—
কেন ঘুমের আগে দোয়া এত গুরুত্বপূর্ণ?
এ দোয়াগুলো মানুষকে শারীরিক নয়, মানসিক প্রশান্তিও দেয়।
অজু করে ঘুমানো স্বাস্থ্য ও সুন্নাহ দু’দিক থেকেই উপকারী।
দোয়া পাঠের মাধ্যমে মনের ভয়, দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক ভাব দূর হয়।
মুমিনের শেষ কথা যেন হয় আল্লাহর স্মরণ—এ মনোভাবকে শক্তিশালী করে।
—
শেষ কথা
আজকের ব্যস্ত ও অস্থির জীবনে প্রশান্ত ঘুম পাওয়া সহজ নয়। অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, ফোন ব্যবহারের আধিক্য কিংবা মানসিক চাপের কারণে রাতভর ঘুম না হওয়া এখন সাধারণ ঘটনা। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ঘুম শুধু শারীরিক বিশ্রাম নয়, এটি ইবাদতের অংশও বটে।
ঘুমানোর আগের এই দু’টি দোয়া শুধু সুন্নাহ নয়, বরং জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি ও ঈমানি স্থিতির সুন্দর এক মাধ্যম। প্রতিদিন রাতে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে এ দোয়াগুলো পড়লে একজন মুমিন বরকতপূর্ণ ও প্রশান্ত ঘুমের পাশাপাশি আল্লাহর সুরক্ষা লাভের আশাও করতে পারে।
মন্তব্য করুন