
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীরা :
দেশে এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা নিয়মিত ডিম খান না। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটি সকালের নাশতায় প্রায় প্রতিদিনই থাকে অনেকের প্লেটে। প্রোটিন, ভিটামিন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় খনিজ—সবই মিলে যায় একটি ডিমে। তাই ডিমকে অনেকেই ‘সুপারফুড’ বলে থাকেন।
তবে পুষ্টিকর হলেও সবার শরীরে ডিম সমানভাবে উপকার করে না। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কিছু বিশেষ শারীরিক অবস্থায় অতিরিক্ত ডিম খাওয়া উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কারা ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন?
১. কোলেস্টেরল বেশি যাদের
ডিম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা মতামত থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ডিমের কুসুমে থাকা উপাদান রক্তে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। যাদের আগে থেকেই কোলেস্টেরল উচ্চমাত্রায়, তাদের নিয়মিত বেশি ডিম খাওয়া ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২. হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা
একটি ডিম প্রতিদিন খেলে সাধারণত ক্ষতি হয় না। কিন্তু দিনে একাধিক ডিম—বিশেষ করে তিন-চারটি—খেলে রক্তে লিপিড বাড়তে পারে, যা হৃদ্রোগের পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। তাই কার্ডিয়াক রোগীদের ক্ষেত্রে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
৩. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
অনেকে ওজন কমানোর জন্য ডিমকে বেছে নেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেশি ডিম খেলে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে উল্টো ওজন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
৪. ডায়াবেটিস রোগীরা
২০০৯ সালে ‘ডায়াবেটিস কেয়ার’ নামে বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে—সপ্তাহে সাতটির বেশি ডিম খাওয়ার সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা যুক্ত। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ডিমের পরিমাণ সাবধানে ঠিক করা উচিত।
ডিম কীভাবে খাবেন?
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ—সেদ্ধ ডিম হলো সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। ভাজা ডিম বা অমলেটে তেল-ঘি ব্যবহার হয় বলে ক্যালোরি বেড়ে যায়, যা অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। একটি সেদ্ধ ডিম প্রতিদিন বেশিরভাগ মানুষের জন্য যথেষ্ট।
কতটি ডিম খাওয়া নিরাপদ?
ভারতে প্রকাশিত মায়ো ক্লিনিক হেলথের তথ্যমতে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সপ্তাহে ৭টি ডিম খেতে পারেন।
অন্যদিকে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে—প্রিডায়াবেটিস বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীরা সপ্তাহে ১২টি ডিম খেলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়নি।
সারসংক্ষেপ
ডিম নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর, তবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণই মূল বিষয়। যাদের কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার সমস্যা আছে—তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাওয়া উচিত। আর সকলের জন্যই সেদ্ধ ডিম সবচেয়ে উপকারী বিকল্প।
মন্তব্য করুন