
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামজুড়ে মাংস বিক্রি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গরু-ছাগল জবাইও কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কেউ কেউ গোপনে জবাই করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা গনি মিয়া (৬০) জানান, গরু-ছাগলের অ্যানথ্রাক্স টিকার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তর ১০ টাকা করে নিয়েছে। কারও ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, “গরু-ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।”
তিনি জানান, সম্প্রতি চারটি গরুর নমুনা পরীক্ষা করে দুটিতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৬টি মনিটরিং টিম মাঠে কাজ করছে। ১৫ আগস্ট থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ রোগে ১৩টি গরু মারা গেছে। ঢাকা থেকে প্রতিটি টিকা ৮০ পয়সায় সংগ্রহ করা হলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করে সর্বোচ্চ ৫ টাকার মধ্যে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় আক্রান্ত মোজাফফর আলী (৫০) জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর গরু জবাইয়ের পর তার হাতে ও চোখে ফোসকা দেখা দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে চাইলে তাকে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। পরে চর্মরোগবিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নেন এবং বর্তমানে কিছুটা সুস্থ আছেন। তবে গ্রামের মানুষ তার কাছাকাছি যেতে ভয় পাচ্ছেন।
একই গ্রামের নুরুন্নবী মিয়ার (১৬) মা নুরনাহার বেগম বলেন, “ছেলের হাতে ফোসকা পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করতে চাইলে চিকিৎসকরা দূর থেকে ওষুধ লিখে দেন। পরে গাইবান্ধার রাবেয়া ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। ওষুধে উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু খরচ অনেক বেশি। ২০ দিনের ওষুধেই প্রায় ৩ হাজার টাকা লাগছে। সরকার যদি ওষুধ সরবরাহ করত, তাহলে ভালো হতো।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, “যেসব রোগী এসেছিলেন, তারা কেউ গুরুতর ছিলেন না, তাই ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয়নি। বেশিরভাগই রাতে হাসপাতালে আসায় তাৎক্ষণিক ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত দুদিনে নতুন করে আরও ছয়জন চিকিৎসা নিয়েছেন। মোট ১৬ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, রোগীরা সাধারণত ১০ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুজ্জামান বলেন, “অ্যানথ্রাক্স মূলত চামড়ায় সংক্রমণ ঘটায়, এটি ভয় পাওয়ার মতো কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল টিম গঠন করেছি। সুন্দরগঞ্জ ছাড়া অন্য কোনো উপজেলায় এখন পর্যন্ত এ রোগ ছড়ায়নি।”
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে একটি অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই করা হয়। পরে ওই গরুর মাংস কাটায় অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে ফোসকা ও চামড়ায় ক্ষতের উপসর্গ দেখা দেয়।
মন্তব্য করুন