
বিশ্বজুড়ে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষ এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৫ লাখ ২০ হাজারে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, লিভার ক্যান্সার বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ক্যান্সারগুলোর একটি। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর এ রোগে প্রাণ হারাতে পারেন প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ, যা বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি (জিসিও) পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে, লিভার ক্যান্সারের প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। পাশাপাশি স্থূলতা, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং যকৃতে চর্বি জমার মতো সমস্যাগুলোকেও অন্যতম ঝুঁকিপর্যায়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে যকৃতে চর্বি জমে যে রোগ হয়, তাকে ‘এমএএসএলডি’ (MASLD) নামে অভিহিত করা হচ্ছে, যা আগে পরিচিত ছিল ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ হিসেবে।
গবেষকরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় হেপাটাইটিস বি’র টিকাদান কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত করা গেলে এ রোগে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। বিশেষ করে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবজাতকদের টিকা নিশ্চিত না করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে কেবল হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০৫০ সালে লিভার ক্যান্সারের ২১ শতাংশ কারণ হবে মদ্যপান—যা ২০২২ সালের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। তেমনি, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের কারণে লিভারে চর্বি জমা কেন্দ্রিক ক্যান্সারের হার বাড়বে ১১ শতাংশে। ফলে এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে গত সোমবার ঢাকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর দেশে ২০ হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে মারা যান। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—প্রতি ১০ জনের ৯ জন জানেনই না যে তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস শনাক্তে নিয়মিত পরীক্ষা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, টিকাদানের হার বাড়ানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস পরিহারে ব্যাপক প্রচারণা এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার স্থূল জনসংখ্যার মধ্যে লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ বলছে, হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণেই লুকিয়ে রয়েছে লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রধান চাবিকাঠি।
মন্তব্য করুন