
আমাদের অনেকেরই ধারণা—রক্তের গ্রুপ শুধু রক্তদানে কাজে লাগে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে শরীরের নানা জটিল বিষয়, বিশেষ করে মস্তিষ্কে স্ট্রোকের ঝুঁকির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, তাদের অল্প বয়সেই স্ট্রোকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে, ‘ও’ গ্রুপের মানুষ সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে থাকেন।
কোন গ্রুপে কতটা ঝুঁকি?
গবেষণা অনুযায়ী—
‘এ’ গ্রুপ (বিশেষ করে উপগোষ্ঠী A1): অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ১৮% বেশি।
‘ও’ গ্রুপ: অন্যদের তুলনায় ১২% কম ঝুঁকি।
এই ফল এসেছে ১৭ হাজার স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ থেকে, যাদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। পরবর্তীতে আরও ৬ লাখ মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়।
কেন ‘এ’ গ্রুপে ঝুঁকি বেশি?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এ গ্রুপের রক্তে এমন কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য ও প্রোটিন (যেমন Von Willebrand Factor ও Factor VIII) থাকে, যা রক্ত দ্রুত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।
এই জমাট রক্তই মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এবং ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্ট্রোকের ধরন
স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়—
1. ইসকেমিক স্ট্রোক: রক্ত জমে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় (A গ্রুপে বেশি দেখা যায়)।
2. হেমারেজিক স্ট্রোক: রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
স্ট্রোকের আগাম উপসর্গ
হঠাৎ নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—
শরীরের একদিকে হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া
কথা জড়িয়ে যাওয়া বা মুখ বেঁকে যাওয়া
চোখে ঝাপসা দেখা বা কিছু সময়ের জন্য অন্ধকার লাগা
ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়া
এই উপসর্গগুলো কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও বিপদের সংকেত হতে পারে। একে বলা হয় টিআইএ (TIA) বা মিনি স্ট্রোক। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে বড় ক্ষতি ঠেকানো যায়।
সময়ই সবচেয়ে বড় অস্ত্র: গোল্ডেন আওয়ার
স্ট্রোকের পর প্রথম ৪.৫ ঘণ্টা হলো ‘গোল্ডেন আওয়ার’। এই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারলে অনেক রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তাই দেরি নয়—লক্ষণ দেখলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন
নিয়মিত রক্তচাপ, সুগার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন
ধূমপান, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি পরিহার করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কিন্তু জীবনযাত্রায় সচেতনতা আনলেই ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়।
আজ থেকেই নিজের যত্ন নিন—আপনার সামান্য সতর্কতা আগামী দিনের বড় বিপদ থেকে আপনাকে ও আপনার প্রিয়জনকে রক্ষা করতে পারে।
মন্তব্য করুন