
ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানেন কি—প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা শরীরের জন্য ঠিক ততটাই বিপজ্জনক? বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পরপরই বসে থাকা শরীরের বিপাকক্রিয়ায় (metabolism) ব্যাঘাত ঘটায় এবং বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের ঝুঁকি।
ভারতের কিমশেলথ ত্রিভান্দ্রম হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীনেশ ডেভিড জানান, খাবার শেষে বসে থাকলে শরীরের বিপাক ধীর হয়ে যায়। এতে শরীরে চর্বি জমে, ওজন বাড়ে এবং রক্তনালিতে ফ্যাট জমে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও তিনি বলেন, এটি ধূমপানের চেয়েও ভয়াবহ নয়, তবুও দীর্ঘসময় বসে থাকা নিঃসন্দেহে শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
দীর্ঘ সময় বসে থাকলে শরীরে যা ঘটে
অফিসের কাজ বা পড়াশোনার কারণে অনেকেই দিনের বেশিরভাগ সময় চেয়ারে বসে কাটান। ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোহিত শর্মা বলেন, দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় বসে থাকলে ধীরে ধীরে বাড়ে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যানসার এমনকি অকালমৃত্যুর আশঙ্কা।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকা মানুষের মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়। তুলনামূলকভাবে, যারা দিনে ১–৫টি সিগারেট খান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৪০–৫০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ দুই অভ্যাসই বিপজ্জনক—একটি তাৎক্ষণিক ক্ষতি করে, অন্যটি ধীরে ধীরে শরীরকে দুর্বল করে।
শুধু হৃদরোগ নয়, আরও নানা সমস্যা
হায়দরাবাদের যশোদা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কে. সোমনাথ গুপ্ত বলেন, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে ঘাড়, কোমর ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পায়ের পেশি দুর্বল হলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং ব্যায়াম করার সময় সহজে আঘাত লাগতে পারে।
এই অভ্যাস বদলানোর সহজ উপায়
বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ পরামর্শ দিয়েছেন, যা মানলে এই ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব—
প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর উঠে কিছুটা হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
পানি পান করতে বসে নয়, দাঁড়িয়ে যান।
পিঠ সোজা করে বসুন এবং মাঝে মাঝে ভঙ্গি পরিবর্তন করুন।
ঘরে বা অফিসে সামান্য হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ সময় বসে থাকা শুধু শরীর নয়, মনকেও প্রভাবিত করে। এতে মনোযোগ কমে, ক্লান্তি আসে এবং উদ্যম হারিয়ে যায়।
সক্রিয় থাকুন, সুস্থ থাকুন
সুস্থ থাকতে চাইলে শুধু ধূমপান ছাড়লেই হবে না—বসে থাকার অভ্যাসও বদলাতে হবে। যতটা সম্ভব হাঁটাচলা করুন, ছোটখাটো কাজ নিজের হাতে করুন এবং প্রতিদিন শরীরকে সক্রিয় রাখুন।
কারণ, “নড়াচড়া মানেই জীবন”—এই সহজ সত্যটি ভুলে গেলে শরীরই তার মূল্য চুকাবে।
মন্তব্য করুন