
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীরা :
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নানা পরিবর্তনের পাশাপাশি হাড়েও আসে দুর্বলতা। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে এক নির্দিষ্ট বয়সের পর দেখা দিতে পারে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো লক্ষণ না থাকলেও, হঠাৎ হাড় ভেঙে গেলে তখনই বোঝা যায় সমস্যা কতটা গভীর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী। তবে পুরুষরাও এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নন। বয়স, হরমোনের পরিবর্তন ও পুষ্টিহীনতা—সব মিলিয়েই তৈরি হয় হাড় নরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
হাড়ের গঠন নির্ভর করে মূলত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন–ডি–এর ভারসাম্যের ওপর। এই উপাদানগুলোর ঘাটতি হলে হাড় হয়ে পড়ে দুর্বল ও ভঙ্গুর। তাই হাড়ের যত্ন শুরু করতে হবে অল্প বয়স থেকেই, যাতে ভবিষ্যতে হাড় মজবুত থাকে।
যেভাবে রাখবেন হাড়ের যত্ন
১️⃣ পর্যাপ্ত আমিষ ও পুষ্টিকর খাবার খান:
হাড় ও পেশি মজবুত রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখুন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ডাল।
২️⃣ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার:
শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, বাদাম, মটরশুঁটি, ডাল, দুধ ও দই—এসব ক্যালসিয়ামের দারুণ উৎস। কাঁটাযুক্ত ছোট মাছেও প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে।
৩️⃣ ভিটামিন–সি:
ভিটামিন–সি হাড়ের সংযোগস্থলকে মজবুত রাখে ও হাড়ক্ষয় রোধ করে। এজন্য প্রতিদিন খান পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, জাম্বুরা, লেবু ইত্যাদি টকজাতীয় ফল।
৪️⃣ জিংক:
জিংক হাড়ের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, ডিম, দুধ, বাদাম, কাঁঠালের বিচি, চিয়া সিড ও সূর্যমুখীর বীজ। প্রাণিজ উৎস থেকে জিংক গ্রহণ করলে তা সহজে শোষিত হয়।
৫️⃣ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, চিয়া সিড ও সূর্যমুখীর বীজে থাকা ওমেগা–৩ হাড়ের গঠন মজবুত করে ও প্রদাহ কমায়।
৬️⃣ ভিটামিন–ডি ও সূর্যের আলো:
ভিটামিন–ডির প্রধান উৎস সূর্যের আলো। প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন–ডি তৈরি হয়। পাশাপাশি খাবারের মধ্যে মাছের তেল, ডিমের কুসুম, গরুর কলিজা ও মাশরুম থেকেও ভিটামিন–ডি পাওয়া যায়।
জীবনযাপনে ছোট কিছু পরিবর্তন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।
ধূমপান ও অতিরিক্ত চা–কফি পান থেকে বিরত থাকুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং হঠাৎ পড়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি এড়ান।
সংক্ষেপে, অস্টিওপোরোসিস কোনো হঠাৎ আসা রোগ নয়—এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। তাই সময় থাকতে সচেতন থাকুন, সঠিক খাবার ও জীবনযাপন অভ্যাস গড়ে তুলুন। সুস্থ হাড়ই দেবে সক্রিয় ও নির্ভার জীবন।
মন্তব্য করুন