
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীরা :
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত ভারী চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সচল আছে কি না, তা মনিটরিং করতে নতুন একটি সফটওয়্যার ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি টাকা।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, অতীতে প্রায় একই ধরনের একটি সফটওয়্যার চালু হলেও তা কখনোই যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে নতুন করে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
🔹 আগের সফটওয়্যার কার্যকর হয়নি
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউএসএআইডি-এর অর্থায়নে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এতে ৪০টিরও বেশি জেলা যুক্ত ছিল এবং প্রতিটি যন্ত্রের সঙ্গে কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছিল, যাতে অনলাইনে যন্ত্রের অবস্থা জানা যায়।
তবে সফটওয়্যারটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা হলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) যন্ত্র বিকল হওয়ার তথ্য পেলেও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ব্যয়বহুল প্রযুক্তিটিও অকেজো হয়ে পড়ে।
🔹 নতুন সফটওয়্যার প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি
চলতি বছরের ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিমিউ অ্যান্ড টিসিকে ‘মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ইনফরমেশন অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম’ তৈরির নির্দেশ দেয়। প্রথমে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত ছিল ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, তবে পরবর্তীতে তা বেড়ে ২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
প্রকৌশলীদের মতে, এমন একটি প্রযুক্তিনির্ভর সিস্টেম তৈরিতে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ কোটি টাকাই যথেষ্ট। তাই ব্যয় বৃদ্ধিকে অনেকেই ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন।
🔹 সিস্টেমের কাজ কীভাবে হবে
নতুন সিস্টেমে প্রতিটি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং ক্লাউড স্টোরেজ থেকে তা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। কোনো যন্ত্র বিকল হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিফিকেশন যাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
তবে দেশে বর্তমানে মাত্র ৭টি যন্ত্রপাতি ‘কম্প্রিহেনসিভ মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্ট (CMC)’-এর আওতায় রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন অন্তত ১৫টির। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূর্ণ সুফল পাওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে।
🔹 বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ একই প্রতিষ্ঠানের হাতে
প্রযুক্তিটি বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ দুই দায়িত্বই থাকবে নিমিউ অ্যান্ড টিসির হাতে। ফলে কোনো যন্ত্র বিকল হলে তার মেরামতের সিদ্ধান্তও তারাই নেবে— যা নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।
🔹 প্রথম পর্যায়ে ১১৪ হাসপাতাল
প্রকল্পের প্রথম ধাপে দেশের ১১৪টি সরকারি হাসপাতালের ৩০০টি যন্ত্রপাতি এই মনিটরিং সিস্টেমে যুক্ত করা হবে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, রেডিওথেরাপি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রকে।
🔹 বিপুল সংখ্যক যন্ত্র বিকল
বর্তমানে দেশের প্রায় ৭০০ সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে রয়েছে নিমিউ অ্যান্ড টিসি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, বর্তমানে ৫০০টিরও বেশি যন্ত্র মেরামতের অপেক্ষায় আছে।
তবে অনেক হাসপাতাল থেকে আবেদন পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
🔹 জনবল সংকটে কাজের গতি কম
নিমিউ অ্যান্ড টিসির চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার জয়ন্ত কুমার মুখোপাধ্যায় জানান, “বর্তমানে ৪১৫টি যন্ত্র মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জনবল স্বল্পতার কারণে পুরো প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগছে। ৯৫টি পদের মধ্যে ৫৮টি এখনো শূন্য।”
🔹 মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন,
> “আগে এমন কোনো সফটওয়্যার ছিল কি না, আমি জানি না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় সফটওয়্যারটি হাসপাতালগুলোতে স্থাপন করা যায়নি।”
সংক্ষেপে:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন ২৯ কোটি টাকার সফটওয়্যার প্রকল্পটি দেশের হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সচল রাখতে সহায়তা করবে— এমন আশাবাদ থাকলেও, অতীত অভিজ্ঞতা ও জনবল সংকটের কারণে এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন