
নিজস্ব প্রতিবেদক:নীরা :
শুঁটকি আমাদের খাদ্যসংস্কৃতির একে অপরিহার্য অংশ। ছোট-বড় সবাই কমবেশি এটি খেতে পছন্দ করেন। প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর শুঁটকি যেমন শরীরের নানা উপকারে আসে, তেমনি অসচেতন প্রস্তুত প্রক্রিয়া ও অতিরিক্ত সেবনের কারণে এর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।
পুষ্টিগুণে ভরপুর শুঁটকি
শুঁটকি মাছ প্রোটিনের এক সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীরের পেশি ও হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম ও শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
এছাড়া শুঁটকিতে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। প্রাকৃতিকভাবে এতে থাকা লবণ ও পটাশিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। তবে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সহজপাচ্য ও হজমে সহায়ক
শুঁটকি মাছ সহজপাচ্য এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। এতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজমশক্তি বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত তেল ও মসলা দিয়ে রান্না করলে বদহজমের ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরিমিত তেল-মসলায় রান্না করার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
প্রচলিত শুঁটকি প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি
দেশের অনেক স্থানে এখনো প্রচলিতভাবে খোলা জায়গায় রোদে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এতে ধুলোবালি, কীটপতঙ্গ কিংবা প্রাণীর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক বা কীটনাশক, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পুরোনো বা নষ্ট মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হলে এর পুষ্টিমানও নষ্ট হয়ে যায়।
শুঁটকি খাওয়ার সময় সতর্কতা
শুঁটকিতে প্রাকৃতিকভাবেই লবণ থাকে, তাই রান্নায় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা উচিত নয়।
রাসায়নিকমুক্ত ও বিশুদ্ধ শুঁটকি কেনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
কম তেল-মসলায় রান্না করা শুঁটকি স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
নিরাপদ উৎপাদন প্রক্রিয়া অপরিহার্য
শুঁটকি যাতে স্বাস্থ্যসম্মত থাকে, তার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা। মাছ আহরণ থেকে শুরু করে শুকানো, সংরক্ষণ ও প্যাকেজিং— প্রতিটি ধাপে পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষার মান বজায় রাখা জরুরি।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ
চট্টগ্রাম ল্যাবএইড এবং পার্ক ভিউ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার লিপি জানান,
> “শুঁটকি মাছের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক, এমনকি ডিএনএ ও আরএনএ গঠনেও ভূমিকা রাখে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,
> “যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে বা রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি, তাদের জন্য শুঁটকি খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। শুঁটকি খাওয়ার পর কেউ শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
মন্তব্য করুন