
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের নামে গঠিত সার্চ কমিটিকে দেওয়া হয়েছিল দুটি স্পষ্ট শর্ত—বিগত সরকারের অনুসারীরা থাকতে পারবেন না, এবং কেউ দুই মেয়াদের বেশি কমিটিতে থাকলে তাকেও বাদ দিতে হবে। অথচ সেই দুটি শর্তই উপেক্ষা করে বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ফিরোজা করিম লেনীকে, যিনি উভয় শর্তের আওতায় পড়েন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে। এনএসসির নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রকাশিত কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের কারো নামই সার্চ কমিটির সুপারিশে ছিল না বলে জানা গেছে।
ঘোষিত কমিটি নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে এখন চলছে তীব্র সমালোচনা ও হতবাক প্রতিক্রিয়া।
এক নারী সংগঠক কালবেলাকে বলেন,
> “কমিটিতে যিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, তিনি পতিত ফ্যাসিস্টের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। বলা হচ্ছে, তার মাধ্যমে ধানমন্ডিতে পতিত আওয়ামী রাজনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে। এমন একজনকে কার স্বার্থে ক্রীড়াঙ্গনে পুনর্বাসিত করা হলো—তা আমরা বুঝতে পারছি না।”
এর আগে সার্চ কমিটির দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছিল এনএসসি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন ও বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি প্রকাশে দেরি হয়।
চলতি বছরের ১৬ জুলাই ঘোষিত শুটিং ফেডারেশনের কমিটিতেও সার্চ কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়। সেখানে যুগ্ম সম্পাদক পদে বিতর্কিত জি এম হায়দারের নাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকেই—তার বিরুদ্ধে শুটারদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আলেয়া ফেরদৌসকে করা হয় সাধারণ মহাসচিব, তবে তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেই জি এম হায়দার।
তবে বিতর্কের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি। এখানে অভিজ্ঞ ও যোগ্য সংগঠকদের উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রভাবশালী ক্রীড়া সংগঠকের পত্নীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিলুপ্ত সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়েদুর রহমান রানা কালবেলা-কে জানান,
> “এনএসসি যে ১৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেছে, এটি আমাদের সুপারিশকৃত নয়। আমাদের প্রস্তাবিত সদস্যদের একজনও ঘোষিত কমিটিতে নেই।”
তিনি আরও বলেন,
> “সার্চ কমিটি গঠনের সময় পরিষ্কার বলা হয়েছিল—আগের সরকারের কেউ থাকবে না এবং যারা দুই মেয়াদের বেশি ছিলেন, তাদের বাদ দিতে হবে। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।”
সাবেক এই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ আরও জানান, ছয়–সাত মাস আগেই তারা যোগ্য সংগঠকদের নিয়ে একটি প্রস্তাবিত কমিটি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে বহু অভিজ্ঞ ব্যক্তির নাম ছিল।
এদিকে আরচারির সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল, দীর্ঘদিন দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরও শর্তের বেড়াজালে উপেক্ষিত হয়েছেন। একইভাবে অভিজ্ঞ সংগঠক আশিকুর রহমান মিকু ও আসাদুজ্জামান কোহিনুরও বাদ পড়েছেন।
ক্রীড়াঙ্গনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, “অদৃশ্য চাপ” ও “রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে” মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছে। ফলে সংস্কারের পরিবর্তে ক্রীড়াঙ্গনে আবারও বিতর্ক, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের সংস্কৃতি ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন