
দেশের ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ, যা নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মাঝে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ও আমানতকারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড এর নেওয়া ৭১০ কোটি টাকার মধ্যে ৫৮৭ কোটি টাকাই খেলাপি হয়েছে।
অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এর মোট ১,১৯৮ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ৬৯৯ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
এছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
সানস্টার বিজনেস লিমিটেড – ৬৭৫ কোটি টাকা
ফারইস্ট বিজনেস লিমিটেড – ৬৭৪ কোটি টাকা
কসমস কমোডিটিজ লিমিটেড – ৬৭২ কোটি টাকা
গ্র্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ – ৬৬৯ কোটি টাকা
বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড – ৬৬২ কোটি টাকা
সিদ্দিক ট্রেডার্স – ৬৪৬ কোটি টাকা
ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড – ৬২৮ কোটি টাকা
মাদারীপুর স্পিনিং মিলস লিমিটেড – ৬১৮ কোটি টাকা
এহসান স্ট্রিল রি-রোলিং মিলস – ৬০৬ কোটি টাকা
আর্দেন্ট সিস্টেমস – ৫৮৩ কোটি টাকা
বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ১,৩০৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করলেও এর মধ্যে ৬২৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, “বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। কিন্তু সরকারের পতনের পর অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, ফলে ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে পড়ছে। এতে আমানতকারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, এবং নতুন উদ্যোক্তারা যথাযথ অর্থায়ন পাচ্ছেন না। এই সমস্যা সমাধানে তিনটি বিষয় জরুরি: সম্পদের জবাবদিহি, ঋণ অনুমোদনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং আদালতের মাধ্যমে দ্রুত ঋণ আদায়।”
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা গভীর সংকটে নিপতিত হতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে।
মন্তব্য করুন