
নিজস্ব প্রতিবেদক: নীরা :
প্রোটিন—শরীর গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান। কিন্তু দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের ঘাটতি হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলে শুধু শক্তি কমে যায় না, পেশি ক্ষয়, হাড় দুর্বলতা, এমনকি সংক্রমণ বৃদ্ধির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
পেশি ক্ষয় ও দুর্বলতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে পেশিতে। যখন খাবারে প্রোটিন কম থাকে, তখন শরীর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর প্রয়োজন মেটাতে পেশি থেকে প্রোটিন টেনে নেয়। এতে পেশি শুকিয়ে যায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য অন্তত ০.৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন, যা সারকোপেনিয়া নামের বয়সজনিত পেশি ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক।
হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ঝুঁকি
কম প্রোটিন খেলে হাড়ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, বেশি প্রোটিন খাওয়া ব্যক্তিদের হাড়ের ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় প্রায় ৬% বেশি। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে হাড় ভাঙার ঝুঁকিও তুলনামূলক কম থাকে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
শিশুদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়
প্রোটিনের অভাব শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে পারে। ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪৯ মিলিয়ন শিশু বৃদ্ধি-অবনতির শিকার। যেসব শিশু নিয়মিত প্রোটিন কম খায়, তাদের উচ্চতা ও ওজনের বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হয় না, এবং তাদের বৃদ্ধি সমস্যার ঝুঁকি চার গুণ বেশি।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়
প্রোটিন শুধু পেশি নয়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও মূলভিত্তি। প্রোটিন থেকেই তৈরি হয় অ্যান্টিবডি, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যথেষ্ট প্রোটিন গ্রহণকারীদের সর্দি-কাশির মতো সাধারণ সংক্রমণ তুলনামূলক কম হয়।
অতিরিক্ত ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধি
প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু শরীরে প্রোটিন কম থাকলে বেশি খেতে ইচ্ছা করে, যা সাধারণত কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিযুক্ত খাবার দিয়ে পূরণ করা হয়। ফলে অজান্তেই অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ হয় এবং ওজন বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, খাদ্যতালিকায় ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে।
দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা কত?
আমেরিকান ডায়েটারি গাইডলাইন (২০২০–২০২৫) অনুযায়ী,
প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের দৈনিক প্রোটিন প্রয়োজন প্রায় ৪৬ গ্রাম,
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য ৫২–৫৬ গ্রাম।
এটি সাধারণত প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন ধরা হয়। তবে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা পেশি বাড়াতে চান, তাদের প্রয়োজন হতে পারে প্রতি কেজিতে ১.৪–২ গ্রাম প্রোটিন পর্যন্ত।
শেষ কথা
প্রোটিন শুধু শক্তির উৎস নয়, এটি শরীরের ত্বক, চুল, হাড়, রক্ত, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও অংশ। তাই প্রতিদিনের খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন নিশ্চিত করা জরুরি। সুষম খাদ্যাভ্যাসই পারে দীর্ঘমেয়াদে শরীরকে রাখবে শক্তিশালী ও সুস্থ।
মন্তব্য করুন