
বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে সামনে ঝুঁকে কাজ করার প্রবণতা আমাদের দেহভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঘাড়ব্যথার মতো সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এই ব্যথা শুধু ঘাড়েই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা কাঁধ, বাহু এমনকি হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে—প্রভাব ফেলে দৈনন্দিন কাজের দক্ষতায়ও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ঘাড় নুইয়ে কাজ করেন, যেমন- কম্পিউটার ব্যবহারকারী, শিক্ষার্থী, মোবাইল আসক্ত ব্যক্তি বা যারা ভারী জিনিস ঘাড়ে বহন করেন, তাদের মধ্যে ঘাড়ব্যথার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া যারা উঁচু বালিশ ব্যবহার করেন বা ঘুমানোর সময় ভুল ভঙ্গিতে থাকেন, তারাও ঝুঁকির বাইরে নন।
ঘাড়ব্যথার কারণ কী?
ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টে টান পড়া, ডিস্কে সমস্যা, হাড়ের গঠনে অস্বাভাবিকতা, বাত বা বয়সজনিত পরিবর্তন এমনকি মানসিক চাপ থেকেও ঘাড়ব্যথা হতে পারে। হঠাৎ ব্যথা শুরু হওয়া, ঘাড় ঘুরাতে কষ্ট হওয়া, একদিকে বাঁকিয়ে থাকার মতো উপসর্গগুলোও অবহেলা করার মতো নয়।
উপসর্গ চিনে নেওয়া জরুরি
ঘাড়ের ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে কাঁধ, বাহু, কনুই ও হাত পর্যন্ত। অনেক সময় আঙুল অবশ লাগতে পারে বা অনুভূতি কমে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা বা হাত-পা দুর্বল হওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
ঘাড়ব্যথা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে কিংবা এমআরআই করা হতে পারে। ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিক্যাল থেরাপি, পেশি শিথিলকারী ওষুধ এবং কখনো কখনো ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধের কৌশল
সুস্থ ঘাড়ের জন্য দরকার সঠিক ভঙ্গিতে বসা, কাজ করার সময় চোখ ও স্ক্রিন সমান রাখার অভ্যাস, শক্ত বিছানা ও পাতলা বালিশ ব্যবহার, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং প্রতিদিন কিছু সময় রোদে থাকা। দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারে বিরতি নেওয়া ও ঘাড়ের হালকা ব্যায়াম করাও বেশ কার্যকর।
ঘাড়ব্যথা একদিনে হয় না, এটি দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকলে এ সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
মন্তব্য করুন